সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:২০ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
বিভিন্ন অনিয়ম ও অবৈধভাবে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ২৫নং ওয়ার্ডে সাধারন আসনে এম সাইদুর রহমান জাকিরকে কাউন্সিলর নির্বাচিত করে গেজেট প্রকাশ করায় নির্বাচন বাতিল চেয়ে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় নব নির্বাচিত কাউন্সিলর এম সাইদুর রহমান জাকির ও প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী আবু হানিফকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। আজ নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে গত দুই বারের নির্বাচিত কাউন্সিলর ও প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী জিয়াউদ্দিন সিকদার জিয়া মামলাটি দায়ের করেন। আদালতের বিচারক মোঃ আলামিন মাতুব্বর মামলটির আদেশ দানে পরবর্তী দিন ধার্য্যরে নির্দেশ দেন।
মামলায় অভিযুক্ত এম সাইদুর রহমান জাকির নগরীর রুপাতলী গোল চত্ত্বর এলাকার ইসাহাক আলী মোল্লার ছেলে এবং আবু হানিফ আদর্শ সড়কের মৃত আফেজদ্দিনের ছেলে। মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবী আজাদ রহমান জানান, গত ৩০ জুলাই বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ২৫নং ওয়ার্ডের সাধারন আসনে কাউন্সিলর পদে লাটিম প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্ধিতা করেন বিগত বছরে দুই বার নির্বাচিত কাউন্সিলর জিয়াউদ্দিন সিকদার।
এছাড়া এম সাইদুর রহমান জাকির ঠেলাগাড়ি ও আবু হানিফ ঘড়ি প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করেন। নির্বাচনে অংশগ্রহনকারী এম সাইদুর রহমান জাকির ক্ষমতাসীন দলের সক্রিয় সদস্য ও তার ভাই এম জাহিদুর রহমান মনির বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগ’র সাংগঠনিক সম্পাদক হওয়ায় মনোনয়নপত্র দাখিলের দিন থেকে নির্বাচনের দিন পর্যন্ত বে-আইনী আচরণ, অর্থ, অস্ত্র, পেশী শক্তি এবং স্থানীয় ক্ষমতা দিয়ে নির্বাচনের পরিবেশকে কলুষিত করে। ভোট কেন্দ্রে নির্বাচনী কর্মকর্তা, কর্মচারী, প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী, নির্বাচনী এজেন্ট, পোলিং এজেন্টদের বিভিন্ন সময় এম সাইদুর রহমান জাকির ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। এছাড়া কাউন্সিলর প্রার্থী জিয়াউদ্দিন সিকদার জিয়ার এজেন্ট, সমর্থকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের এলাকা ছাড়া করতে বাধ্য ও টাকার বিনিময়ে ভোট ক্রয়ের চেষ্টা করে।
এতে জিয়াউদ্দিন সিকদার জিয়ার সমর্থকসহ নিরীহ ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে ভোট প্রদান করতে পারে নাই। যা নির্বাচনী ফলাফলে প্রভাব বিস্তার করে। ভোটের দিন জিয়াউদ্দিন সিকদার জিয়া ৯৮, পশ্চিম রুপাতলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে অবস্থান করারা সুযোগে বাকি ৪টি ভোট কেন্দ্রে ৯৯, রুপাতলী জাগুয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১০০, রুপাতলী জাগুয়া ডিগ্রী কলেজ ও রুপাতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১০১, এ ওয়াহেদ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় (পুরুষ), ১০২, সখিনা খাতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং এ ওয়াহেদ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের উত্তর ভবনে (মহিলা) ভোট কেন্দ্রে এম সাইদুর রহমান জাকির তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে ব্যাপক তান্ডব চালায়। ওই ৪টি ভোট কেন্দ্রে জিয়াউদ্দিন সিকদার জিয়ার সমর্থকদের ভোট প্রদান করতে বাধা দেয়া, এজেন্টদের ভয়ভীতি দেখানো ও প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারি প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসারদের যোগাযোগে তার ১২৯টি ভোট ডাবল সিল মেরে নষ্ট করা হয়।
তাদের বে আইনী ও অবৈধ কর্মকান্ডের ফলে জিয়াউদ্দিন সিকদার জিয়াকে ৩৭১টি ভোট, এম সাইদুর রহমান জাকিরকে ৫ হাজার ৯৮৬ ভোট ও আবু হানিফকে ২৬৮ প্রাপ্ত দেখানো হয়। এছাড়া এম সাইদুর রহমান জাকির তার নির্বাচনী ব্যয় সীমার অতিরিক্ত ৫০ লাখ টাকার উর্ধ্বে খরচ করেন। অথচ অবাধ সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে জিয়াউদ্দিন সিকদার জিয়া জয়লাভ করতেন। নির্বাচনের দিন ফরিদপুর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও প্রধান সমন্বয়কারী ভোট কেন্দ্রে সুষ্ঠু ভোট গ্রহণে বাধাঁ সৃষ্টি করার ২৮টি ঘটনা সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনার সচিবকে অবহিত করেন। পর্যবেক্ষক দল বিরোধপূর্ণ ২৫নং ওয়ার্ডের ভোট কেন্দ্রের বনর্ণা দেন। এতে ভোট কেন্দ্র ৯৯- সকাল ১১.৪০ ঘটিকায় নৌকা প্রতিকের লোকজন দ্বারা ভোটকেন্দ্রটি নিয়ন্ত্রিত। সাধারন ভোটারগণ ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারছে না।
ভোট কেন্দ্র ১০০- সকাল ১১.৪০ ঘটিকায় নৌকা প্রতিকের লোকজন দ্বারা ভোটকেন্দ্রটি নিয়ন্ত্রিত। সাধারন ভোটারগণ ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারছে না। ভোট কেন্দ্র ১০১- সকাল সাড়ে আটটায় ট্যাব পরিচালনাকারীর ট্যাব ছিনাতাই। ভোট কেন্দ্র ১০২- সকাল সাড়ে ১১টায় মেয়র পদের ব্যালট পেপার শেষ হয়। ওই প্রতিবেদন মোতাবেক আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ১৫টি ভোট কেন্দ্রের ফলাফল স্থগিত করেন। এরই ধারাবাহিকাতায় বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ৭ আগষ্ট ৪ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি ১৯ আগষ্ট বিরোধপূর্ণ ২৫নং ওয়ার্ডের ভোটকেন্দ্রতে তদন্ত পরিচালনা করেন।
তদন্তে ৫টি ভোট কেন্দ্রের অনিয়ম ও বে-আইনী কার্যক্রম প্রমানিত হয়। নির্বাচন কমিশনার মাহাবুব তালুকদার বরিশাল সিটি নির্বাচনের দায়িত্বে থেকে তিনি সমগ্র নির্বাচন বাতিলের জন্য নির্বাচন কমিশনে মতামত প্রদান করেন। কিন্তু নির্বাচন কমিশন এম সাইদুর রহমান জাকির ক্ষমতাসীন দলের লোক হওয়ায় ৪ অক্টোবর শুধুমাত্র ৯৯, রুপাতলী জাগুয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৯নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে নির্বাচনের জন্য ১৩ অক্টোবর দিন ধার্য্যে করেন। এঘটনায় গত ৫ আগষ্ট জিয়াউদ্দিন সিকদার জিয়া ৩০ জুলাই অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ৫টি ভোট কেন্দ্রের ভোট বাতিল চেয়ে পুনরায় নতুনভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য রিটানিং অফিসারের কাছে আবেদন করেন।
আবেদন প্রাপ্ত হয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জিয়াউদ্দিন সিকদার জিয়া স্বপক্ষে থাকা সত্ত্বেও নির্বাচনের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেন নাই। পক্ষান্তরে ৮ অক্টোবর বাংলাদেশ গেজেট অতিরিক্ত সংখ্যায় এম সাইদুর রহমান জাকিরের নাম প্রকাশ করা হয়। এঘটনায় আজ মামলাটি দায়ের করা হয়।
Leave a Reply